অনলাইন ডেস্ক ::
নরসিংদীতে প্রবাসীকে বহনকারী গাড়ীতে ডাকাতির অভিযোগে ৪ পুলিশসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রায়পুরা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সাখাওয়াত হোসেন (বিপি নং-৮৩১৩১৪৮৩২৪), উপ পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম, কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম (কং নং-৪৪৪), সাইদুল ইসলাম (কং নং-১৮৩) এবং নুর মোহাম্মদ, সাদেক মিয়া ও গাড়ী চালক নুরুজ্জামান মোল্লা। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সাইদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমিরাবাদ এলাকার মাঈন উদ্দিন ও আবদুল্লাহপুর এলাকার মতিন মিয়া ও হাইরমারা এলাকার সোহেল মিয়া মালয়েশিয়া প্রবাসী জীবনযাপন করতেন। এরই মধ্যে ছুটিতে সোহেল মিয়া বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিলে মাঈন উদ্দিন ২০০ গ্রামের দুটি স্বর্ণের বার ও মতি মিয়া ১৫০ গ্রামের বার তাকে দেয়।
মো. সোহেল মিয়া গত ২৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) সন্ধ্যায় শাহজালাল আনন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ভাড়া করা গাড়িতে করে ভাগিনা মিজান, কাউছার মিয়া, ভাতিজা রিপন মিয়া, পরিচিত একই উপজেলার আবদুল্লাহপুর এলাকার মো. আবদুল্লাহ বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় চালক নুরুজ্জামান মোল্লা মুঠোফোনে অজ্ঞাত কারো সঙ্গে কথা বলে যাতায়াতের অবস্থান জানিয়ে তথ্য দিচ্ছিলেন।
গাড়িতে থাকা সোহেল কাকে তথ্য দিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে চালক জানায় গাড়ির মালিক মোস্তফার সঙ্গে কথা বলছেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটি নরসিংদী সদর উপজেলার ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সাহেব প্রতাব এলাকার বিএল সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেয়ার জন্য চালক গাড়ি থামায়। এসময় অপর একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে উপ পরিদর্শক সাখাওয়াত ও আজহার আলীসহ ৪/৫ জন অস্ত্র ও ওয়ারলেস সেট দেখিয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রবাসী সোহেলের গাড়িতে অবৈধ মালামাল রয়েছে বলে গাড়ি থেকে টেনে নামান।
পরে তারা অস্ত্রের মুখে সবাইকে লাঠি দিয়ে মারধোর শুরু করেন। পরে তাদের তল্লাশীর নাম করে তারা প্রবাসী সোহেলের কাছ থেকে ২০০ গ্রামের ২টি স্বর্ণের বার, এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, মোবাইল ফোনসহ প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নেয়। আর যাওয়ার সময় তাদের গাড়িতে মিজান ও কাউছারকে তোলে নিয়ে চলে যায় এবং তাদের গাড়ি অনুসরণ করতে বলে। তাদের গাড়ি শহরের পুরানপাড়া এলাকায় পৌছলে আহত অবস্থায় মিজান ও কাউছারকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পুনরায় নরসিংদীর দিকে চলে যায়।
এ ঘটনায় প্রবাসী মাঈন উদ্দিনের ভাই মো. শাহজাহান লিখিতভাবে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে সিএনজি স্টেশনের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ঘটনার সত্যতা পান এবং রায়পুরা থানার ৪ পুলিশসহ অন্য তিনজনকে চিহ্নিত করেন। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমাকি ১২টার দিকে মো. শাহজাহান মিয়া বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক রুপন কুমার সরকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তিনজন এবং রায়পুরা থানার দুই এসআই ও দুই কনস্টেবলসহ মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি লুট হওয়া মালামালের মধ্যে ১শ’ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার, নগদ ২৯ হাজার ২ শত ৫৫ টাকা ও একটি ৩ রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল উদ্ধার করেছেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক রুপন কুমার সরকার গ্রেপ্তার ও লুট হওয় মালামাল উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের সম্পৃক্ততায় আমরা বিব্রত। এব্যাপারে আরও কিছুই বলতে পারব না।
পাঠকের মতামত: